বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের ধারণা (পাঠ ১)

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য | - | NCTB BOOK
564
564

সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যে ধর্মের ভূমিকা

মানুষের ব্যক্তি ও সমাজজীবনে ধর্ম খুবই বড়ো ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশে আবহমানকাল থেকে বাস করে নানা ধর্মের মানুষ। মানুষের সামাজিক আচার-আচরণে তাই ধর্মের প্রভাব লক্ষণীয়।

ইসলাম এদেশে আসে সুফিসাধকদের মাধ্যমে। মধ্যযুগে তুরস্ক, ইরান, ইরাক, আফগানিস্তান ও মধ্য এশিয়া থেকে আগত মানুষের মাধ্যমে বাংলায় মুসলিম সমাজের প্রসার ঘটেছে। দীর্ঘকালের পরিক্রমায় এদেশে বিশাল এক মুসলিম জনগোষ্ঠী তৈরি হয়েছে। মুসলমানদের রয়েছে নিজস্ব সংস্কৃতি। তাদের রয়েছে দুটি ঈদ উৎসব-ঈদ-উল-ফিতর ও ঈদ-উল-আজহা। তবে প্রাচীন কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ সমাজের ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন ধর্মবিশ্বাসী মানুষেরা এদেশে পাশাপাশি শান্তিতে বসবাস করে আসছে। বাংলার সংস্কৃতিতে পুঁথিপাঠ, বাউল মুর্শিদি গানসহ বিভিন্ন লোকগানে আর নকশিকাঁথাসহ অধিকাংশ লোকশিল্পে সকল সম্প্রদায়ের মানুষের অবদান রয়েছে।

বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায় আবহমানকাল থেকে নানা পূজা-পার্বণ ও দেবদেবীর ভজনা করে আসছে। হিন্দুদের প্রধান উৎসব দুর্গাপূজা, কালীপূজা, সরস্বতী পূজা, জন্মাষ্টমী ইত্যাদি। দেবতার প্রতিমা তৈরি ও এর সাজসজ্জা, অলংকরণ, পট নির্মাণ ইত্যাদি চারুকলার চর্চা যেমন রয়েছে তেমনি আরাধনা, আরতি মিলে ভক্তিমূলক নৃত্য, গীতের চর্চাও প্রচলিত রয়েছে। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী পাহাড়ের বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর তেমন রয়েছে পানি উৎসব বা অন্যান্য পূজার আয়োজন আর তাদের বড়ো উৎসব বুদ্ধপূর্ণিমা, প্রবারণা পূর্ণিমা।

বাংলাদেশে অন্যান্য ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টধর্মের লোকও রয়েছে। বৌদ্ধরা গৌতম বুদ্ধের অনুসারী। তাঁরা বুদ্ধ পূর্ণিমায় উৎসবমুখর অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এদেশের খ্রিষ্টান সম্প্রদায় নিজেদের নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও পার্বণ উদযাপন করে থাকে। বড়দিন বা যিশুখ্রিষ্টের জন্মদিনে অবশ্য বড়ো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে অন্যান্য সম্প্রদায়ের মানুষও আমন্ত্রিত হয়। দেশের বিভিন্ন নৃগোষ্ঠীর মানুষের আছে নানা ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব। নববর্ষে, বসন্তে, বিয়েতে আনন্দময় উৎসবের আয়োজন করে তারা।

ধর্মীয় রীতি-নীতি, আচার-অনুষ্ঠান পালনে পার্থক্য থাকলেও সব ধর্মের মূল শিক্ষা শান্তি ও সম্প্রীতি। বাংলার সাধারণ মানুষ আজীবন সেই ধারাই অনুসরণ করে আসছে।

ভাষা বিচারে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য

বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বললেও কিছু সংখ্যক অধিবাসী আছেন যাদের মাতৃভাষা বাংলা নয়। যেমন- চাকমা, মারমা, গারো, খাসিয়া, মণিপুরি, সাঁওতাল ইত্যাদি। এভাবে ভাষার দিক থেকেও এদেশে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য দেখা যায়। এদেশের মানুষের প্রধান ভাষা বাংলা হলেও এই ভাষার মধ্যে দিনে দিনে অনেক ভাষার মিশ্রণ ঘটেছে। হাজার বছর ধরে নানা জাতির মানুষ এসেছে বাংলাদেশে। তাদের ভাষার প্রভাব পড়েছে বাংলা ভাষায়। তাই বাংলা ভাষায় খোঁজ করলে পাওয়া যায় অস্ট্রিক, দ্রাবিড়, সংস্কৃত, পালি, আরবি, ফার্সি, পর্তুগিজসহ অনেক বিদেশি ভাষার মিশ্রণ।

সম্প্রদায় বিচারে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য

ধর্ম এবং ভাষার মতো সম্প্রদায়ের দিক থেকেও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য দেখা যায় বাংলাদেশে। এদেশের ধর্ম সম্প্রদায়গুলো ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান ছাড়াও প্রত্যেকের আলাদা সামাজিক জীবনযাপন পদ্ধতি আছে। সামাজিক আচার অনুষ্ঠান ও প্রথা পালনে এক এক সম্প্রদায়ের এক এক ধরনের রীতি রয়েছে। সম্প্রদায়সমূহের প্রত্যেকের মধ্যে খাওয়া দাওয়া, পোশাক পরিচ্ছদ, বিয়ের অনুষ্ঠান, সম্পত্তিতে অধিকার, জন্ম ও মৃতদেহ সৎকারের নিয়মকানুন পালনে রয়েছে ভিন্নতা। এদেশের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের জীবনাচরণের মধ্যে নানান সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য লক্ষ করা যায়।

বিচিত্র সাংস্কৃতিক মিশ্রণ

বাংলাদেশের বৈচিত্র্যপূর্ণ জনসম্প্রদায়গুলোর বহুবছরের সহাবস্থানের ফলে বিভিন্ন ধর্ম-সম্প্রদায়ের মানুষের সংস্কৃ-ি তর মধ্যে আদান প্রদান মিথস্ক্রিয়া চলমান আছে। ফলে এক সংস্কৃতি আরেক সংস্কৃতিকে প্রভাবিত করে। এভাবে বিভিন্ন ধর্ম-সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে সাংস্কৃতিক সহাবস্থান ও মিশ্রণ ঘটতে থাকে। এই মিশ্রণ ঘটে ভাষা, খাবার দাবার, পোশাক পরিচ্ছদ, নানা উৎসব অনুষ্ঠান, আচার ও প্রথায়। এমনি করে বিভিন্ন সংস্কৃতির সহাবস্থান ও মিশ্রণের মধ্যদিয়ে এদেশে যে সংস্কৃতি লক্ষ্য করি তাকেই একবাক্যে বলতে পারি 'বাংলাদেশের সংস্কৃতি'।

কাজ-১: ধর্ম আমাদের সংস্কৃতি ও জীবনযাপনে কী ধরনের প্রভাব ফেলেছে?
কাজ-২: আমাদের সংস্কৃতিতে ভাষার প্রভাব ব্যাখ্যা কর।
কাজ-৩: বাংলাদেশে নানা সম্প্রদায়ের মানুষের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য বর্ণনা কর।
common.content_added_by
টপ রেটেড অ্যাপ

স্যাট অ্যাকাডেমী অ্যাপ

আমাদের অল-ইন-ওয়ান মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সীমাহীন শেখার সুযোগ উপভোগ করুন।

ভিডিও
লাইভ ক্লাস
এক্সাম
ডাউনলোড করুন
Promotion